Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
টিকা প্রদান
বিস্তারিত
টিকার নাম ব্যবহারবিধি
১। তড়কা রোগের টিকা (Anthrax Vaccine) তড়কা টিকা ১০০ মিলি বোতলে তরল অবস্থায় থাকে। পশুর ৬ মাস বয়সে প্রথম টিকা দিতে হয়। গরু ও মহিষের জন্য টিকার মাত্রা হল ১ মিলি. এবং ছাগল ও ভেড়ার জন্য ০.৫ মিলি। ১ বছর অন্তর এ টিকা দিতে হয়। এ টিকা পশুর ঘাড়ের/গলার  চামড়ার নিচে দিতে হয়। তবে ৭ মাসের ঊর্দ্ধ বয়সের গর্ভবতী গরু/মহিষকে দেয়া যাবে না। ছাগল/ভেড়ার ক্ষেত্রে গর্ভধারণের ৩ মাস পরে  দেয়া যাবে না ।
২। গলাফুলা রেগের টিকা (Haemorrahagic Septicemia vaccine) গলাফুলা টিকা ১০০ মিলি তরল অবস্থায় বোতলে থাকে। পশুর ৬ মাস বয়সে প্রথম টিকা দিতে হয়। গরু ও মহিষের জন্য টিকার মাত্রা হল ২ মিলি. এবং ছাগল ও ভেড়ার জন্য ১ মিলি।  প্রতি ৬ মাস অন্তর টিকা দিতে হয়। এ টিকাও  পশুর ঘাড়ের চামড়ার নিচে দিতে হয়।
৩। বাদলা রোগের টিকা (Black Quarter Vaccine) বাদলা রোগের টিকা ১০০ মিলি তরল অবস্থায় বোতলে থাকে। পশুর ৬ মাস বয়সে প্রথম টিকা দিতে হয়। গরু ও মহিষের জন্য মাত্রা হল ৫ মিলি এবং ছাগল ও ভেড়ার জন্য ২ মিলি। প্রতি ৬ মাস অন্তর টিকা দিতে হয়। এ টিকা পশুর ঘাড়ের চামড়ার নিচে দিতে হয়। তবে এ রোগের টিকা   ২.৫-৩ বছর পরে আর গরু/ মহিষকে দেয়ার প্রয়োজন হয় না ।
৪। ক্ষুরা রোগের টিকা (Foot & Mouth Disease Vaccine) ক্ষুরা রোগের টিকা বোতলে তরল অবস্থায় থাকে। পশুর ৪ মাস বয়সে প্রথম টিকা দিতে হয়। এ রোগের বিভিন্ন স্ট্রেইনের জন্য বিভিন্ন ভ্যাকসিন পাওয়া যায় যেমন- মনোভ্যালেন্ট, বাইভ্যালেন্ট ও ট্রাইভ্যালেন্ট, ইত্যাদি। গরু ও মহিষের জন্য ভ্যাকসিনের মাত্রা মনো হলে ৩, বাই হলে ৬ এবং ট্রাই হলে ৯ মিলি এবং ছাগল ও ভেড়ার জন্য গরুর অর্ধেক ডোজ দিতে হয়। প্রতি ৪ মাস অন্তর টিকা দিতে হয়। এ টিকা পশুর ঘাড়ের চামড়ার নিচে দিতে হয়। উল্লেখ্য, গর্ভবতী পশুকেও এ টিকা দেয়া যায়।
৫। জলাতঙ্ক রোগের টিকা (Rabies Vaccine) জলাতঙ্কের জন্য দুই ধরনের টিকা পাওয়া যায়, যথা: HEP and LEP। জলাতঙ্ক রোগের টিকা ভায়ালে বা এম্পুলে হিমশুষ্ক অবস্থায় থাকে। ভায়ালের টিকা     ৩ মিলি বিশুদ্ধ (Distilled water) পানিতে মিশিয়ে সম্পূর্ণ টিকা মাংসপেশীতে ইনজেকশন করতে হয়।     উল্লে­খ্য HEP (GBP Bwc) টিকা বিশুদ্ধ পানিতে মিশিয়ে  ১.৫ মিলি পরিমাণ গরু ও মহিষের ৬ মাস বয়সে মাংসপেশীতে ইনজেকশন করতে হয়। LEP (GI Bwc) কুকুরের ৩ মাস বয়সে প্রথম এবং প্রতি বছর একই নিয়মে এ টিকা (৩.০ মিলি) দিতে হয়। এছাড়াও পশুকে কুকুরে কামড়ানোর পরে পোস্ট এক্সপোসার ভ্যাকসিন এআরভি (Anti Rabies vaccine/ ARV) দিতে হয়। বেসরকারি ওষুধ কোম্পানির র‌্যাবিসিন (Rabisin) ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। মাত্রা হলো- ১ম দিন ৪ মিলি  ৪ স্থানে   ১ মিলি করে, ৭ম দিনে ৩ মিলি ৩ স্থানে ১ মিলি করে এবং ২১তম দিনে  ৩ স্থানে ১ মিলি করে ৩ মিলি মাংসে দিতে হয় ।
৬। ছাগলের বসন্তের টিকা (Goat pox vaccine)  ছাগলের বসন্তের টিকা ভায়ালে হিমায়িত অবস্থায় থাকে। ভায়ালের সাথে বিশুদ্ধ পানি থাকে। পানিতে এ টিকা গুলে ২ মিলি প্রতি ছাগলের লেজের গোড়াতে ত্বকের নিচে ইনজেকশন করতে হয়। ছাগলের ৫ মাস বয়সে প্রথম এ টিকা দিতে হয়।
৭। ছাগলের পিপিআর টিকা (PPR Vaccine) ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন ভায়ালে হিমায়িত অবস্থায় থাকে। ভায়ালের সাথে ১০০মিলি ডাইলুয়েন্ট থাকে। এ টিকা সরবরাহকৃত ডাইলুয়েন্টের ভেতর ভালো করে মিশিয়ে  প্রতিটি ছাগলকে ঘাড়ের চামড়ার নীচে ১ মিলি ইনজেকশন করে দিতে হয়। ছাগলের ৩ মাস বয়সে প্রথম এ টিকা দিতে হয়। এ টিকা এক বছর অন্তর দিতে হয়। উল্লে­খ্য, গর্ভবতী ছাগলকেও এ টিকা দেওয়া যায় ।

P-7ভ্যাকসিন/টিকা প্রদানকারী করণীয়
ভ্যাকসিন বা টিকা দেয়ার উদ্দেশ্য হলো পশুপাখিকে রোগের হাত হতে রক্ষা করা কিন্ত অনেক সময় ভ্যাকসিন দিয়ে রোগের প্রকোপ কমানো যায় না এমনকি রোগ প্রতিরোধ তৈরির পূর্বে অনেক পশুপাখি দুর্ঘটনায় পড়ে। ভ্যাকসিন দেয়ার পর পরই প্রচন্ড ব্যথা হওয়া, লালা ঝরা, অস্থিরতাসহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় এমনকি পশু সংগে সংগে/কয়েক ঘন্টার মধ্যে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। আবার অনেক সময় ভ্যকাসিনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে টিকা প্রদানের জায়গার মাংসপেশী অনেক ফুলে যায় অথবা ফোঁড়া হয়। এমনকি দুধ শুকিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এসব দুর্ঘটনা এড়াতে হলে ভ্যাকসিন প্রদানকারীকে অবশ্যই নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ মেনে চলতে হবে। 
(১)    টিকা বা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার মেয়াদকাল দেখে নিতে হবে অর্থাৎ ভ্যাকসিনের মেয়াদ উর্ত্তীণের তারিখ নিশ্চিত হতে হবে।
(২)    ব্যবহারের পূর্ব পর্যন্ত ভ্যাকসিন কুল বক্স বা ফ্লাক্সে রাখতে হবে। 
(৩)    ব্যবহারের পূর্বে বোতল ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে যাতে টিকা সমভাবে মিশে যায়।
(৪)    ভ্যাকসিন সাধারণত ভোরে দেয়া উত্তম।
(৫)    সরাসরি সূর্য কিরণ থেকে টিকার বোতল দূরে রাখতে হবে।
(৬)    সব গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া একত্র করে ভ্যাকসিন দিতে হবে।
(৭)    বোতল খোলার ২ ঘন্টার মধ্যে ভ্যাকসিন প্রদান শেষ করা উত্তম।
(৮)    ভ্যাকসিন কোনো ছায়াযুক্ত বা গাছের নীচে ব্যবহার করতে হবে।
(৯)    যে কোনো ভ্যাকসিন প্রথমে একটি  পশুকে দিয়ে ১৫-২০ মিনিট লক্ষ্য করতে হবে কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হয় কিনা যদি না হয় তবে নিশ্চিন্তে বাকী পশুদেরকে দেয়া যায়।
(১০)    যে সব টিকা চামড়ার নীচে দিতে হয় তা যেন কোনো অবস্থায় মাংসপেশীতে না যায়। 
(১১)    টিকা কেবল সুস্থ সবল পশুকে দেওয়া উচিত।
(১২)    দুর্বল পশু ও ৪ মাসের নীচের পশুকে  ভ্যাকসিন দেয়া ঠিক নয়।    
ভ্যাকসিন বা টিকা ফলপ্রসূ না হওয়ার কারণসমূহ 
যেসব কারণে গবাদিপশুকে ভ্যাকসিন বা টিকা দেয়ার পরও রোগ প্রতিরোধ হয় না তা নীচে বর্ণিত হলো। 
১.    পশুপাখির যে রোগের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে যদি ওই রোগের জীবাণু পূর্বেই পশুপাখির শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকে তবে ওই ভ্যাকসিন কার্যকর হবে না বরং আরো দ্রুত রোগ দেখা দিবে।। এজন্য কোনো পশুপাখির খামার/ ঝাঁকে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার পর ওই খামার/ঝাঁকে কোনো সময়ই ওই রোগের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন দেয়া উচিত নয় । 
২.    ভ্যাকসিনের গুণগতমান সঠিক না থাকলে অর্থাৎ নিম্নমানের হলে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেও কাজ হয় না। সাধারণত রোগজীবাণুর স্ট্রেইন, টাইপ এবং ভ্যাকসিনের স্ট্রেইন, টাইপ এক হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার পরও পশুপাখি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। 
৩.    ভ্যাকসিন ঠিকমতো বা পরিমাণমতো শরীরে প্রবেশ না করলে ভ্যাকসিন ফলপ্রসূ হয় না ।  
৪.    সুষ্ঠু পরিবেশ তথা যথাযথ তাপমাত্রায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণ না করলে ওই ভ্যাকসিন দেয়ার পরও রোগ দেখা দিতে পারে। 
৫.    জীবিত জীবাণু দিয়ে তৈরি ভ্যাকসিনের জীবাণুগুলো মৃত হলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে। 
৬.    ভ্যাকসিন দেয়ার যন্ত্রপাতি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত না হলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে। 
৭.    খাবার পানির মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেয়ার সময় ক্লোরিনযুক্ত পানি ব্যবহার করা হলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। 
৮.    ভ্যাকসিন পানির সাথে মিশানোর পর সাথে সাথে ব্যবহার করতে হবে এবং তা সংরক্ষণ করা যাবে না। 
৯.    ভ্যাকসিন ব্যবহারের সময় ভ্যাকসিন ফ্রিজ থেকে বের করার পর ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় আনার পর প্রয়োগ করতে হয়। প্রয়োগের পূর্বে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হয়। বোতল খোলার পর গ্রীষ্মকালে ৪ ঘন্টা ও শীতকালে         ৮ ঘন্টার মধ্যে ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে হয়। অন্যথায় ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ব্যাহত হতে পারে। 
১০.    যে ভ্যাকসিনের ব্যবহারের তারিখ শেষ হয়ে গেছে ওই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে কোনো ফল পাওয়া যাবে না। 
১১.    অসুস্থ ও দুর্বল পশুকে ভ্যাকসিন দিলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় না। 


ডাউনলোড